E-token Time For Indian Visa

Most of the people know that, To get Indian Visa E-token is too much difficult. If you able to try just perfect time, may be you will get an e token for Indian visa. We try to serve you the perfect time for E-token in this site Every day.

New system For Indian E token July 11 2015

Surely everyone is doing well. I am with you again. This is my "New System for Indian E-token- 2015". Indian authorities did not consider that Bangladeshi, people are mankind. Last Friday afternoon once again they change their websites system and in front of us brought a new critical situation. Active all tricks have to change for this situation. Come and see the new system

Make Your Pc Faster In An Easy Way-part-3

Slim Cleaner is a free software for cleaning and optimizing PC and Mobile Device. It's a Golden Verified Partner of Microsoft Corporation. Specially Designed for WinXp, Vista, Win7, Win 8 and Win 10.

Remove shortcut virus in 30 second

Here we will show how you can easily get rid of this problem and remove "Shortcut Virus" from your PC.

Required Documents for Indian Visa Purpose

In fact, most of people do not know what to do when submit an e-token to IVAC/Visa Processing Center/Indian Embassy and which documents they have to collected and sorted. In the mean time, many local broker or fraud lead them to earn some big amount from sufferer. Let’s go to topic.

Sunday 17 February 2019

বৈদেশিক সম্পর্ক

 বৈদেশিক সম্পর্ক
গত ২৫-২৬ মে ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে ভারতের পরিশ্চমবঙ্গ সফর করেন। সফরকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের অর্থায়নে নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধন করেন।

এর পাশাপাশি তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সমাবর্তনে 
হিসেবেও যোগাযোগ করেন।

সফরকালে আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) উপাধিতে ভূষিত করে।

ভারত থেকে ভেড়ামারা-বহরমপুর গ্রিডের মাধ্যমে ও ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।

২০১৭ সালে শুধুমাত্র সৌদি আরবে রেকর্ড সংখ্যক ৫৫১,৩০৮ জন বাংলাদেশী নিয়োগলাভ করেছে।

জিসিসিভূক্ত অন্যান্য দেশেও কর্মসংস্থানের উর্ধ্বমূখী ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি জর্ডান, ইরাক এবং লেবাননেও আমাদের শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হয়েছে।

 ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারত-দু’দেশের সরকার কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তি

১৯৭৪-এর প্রটোকল স্বাক্ষর এবং ২০১৫ এ স্থল সীমানা চুক্তির অনুসমর্থন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদীর্ঘ প্রচেষ্টারই সুফল। ইন্সট্রুমেন্ট অব রেটিফিকেশন এবং লেটার অব মোডালিটিস স্বাক্ষরের মাধ্যমে তৎকালীন ১১১টি ভারতের ছিটমহল বাংলাদেশের এবং আমাদের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অংশ হয়ে যায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফর ৬-৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ বাংলাদেশ সফর করেন। এই সফরের সবচেয়ে আলোচিত ল্যান্ডমার্ক সাফল্য হচ্ছে ১৯৭৪ সালের ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন যার ফলশ্রুতিতে ভারতের কংগ্রেসের উভয় কক্ষ অর্থ্যাৎ লোকসভা ও রাজ্যসভায় চুক্তির রেটিফিকেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র বাংলাদেশ সফর ৬-৭ জুন ২০১৫ বাংলাদেশ সফর করেন। এ সফরে সর্বমোট ২২টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়I

বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ফুলবাড়ীতে (বাংলাবান্ধার বিপরীতে) ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু করা হয়। স্থল শুল্ক স্টেশন/স্থল বন্দর এবং অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যিক অবকাঠামো উন্নয়নে দু’দেশ ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পক উন্নয়ন এসকল পদক্ষেপসমূহ নিঃসন্দেহে ভূমিকা রাখবে।

গত কয়েক বছরে স্বাক্ষরিত দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল রুট সম্পর্কিত প্রটোকল, ঢাকা-গৌহাটি-শিলং এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকসহ বিভিন্ন চুক্তি দেশ দু’টির আন্তঃযোগাযোগ সম্প্রসারণে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। মৈত্রী এক্সপ্রেসের ঢাকা ও কলকাতায় প্রান্তীয় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে। 

গত ২৫-২৬ মে ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে ভারতের পরিশ্চমবঙ্গ সফর করেন। সফরকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের অর্থায়নে নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধন করেন।

এর পাশাপাশি তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সমাবর্তনে ‘হিসেবেও যোগাযোগ করেন।

সফরকালে আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) উপাধিতে ভূষিত করে।

ভারত থেকে ভেড়ামারা-বহরমপুর গ্রিডের মাধ্যমে ও ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।



২০১৭ সালে শুধুমাত্র সৌদি আরবে রেকর্ড সংখ্যক ৫৫১,৩০৮ জন বাংলাদেশী নিয়োগলাভ করেছে।



জিসিসিভূক্ত অন্যান্য দেশেও কর্মসংস্থানের উর্ধ্বমূখী ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি জর্ডান, ইরাক এবং লেবাননেও আমাদের শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হয়েছে।



মানব পাচারের শিকার বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুততম সময়ে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারের বলিষ্ঠ কূটনৈতিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

এসময় বিভিন্ন দেশের জলসীমায় উদ্ধারকৃত ২৫৫০ জনসহ লিবিয়া, থাইল্যান্ড ও ইয়েমেন
থেকে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

এপ্রিল ২০০৯ সালে সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশা আব্দুল্লাহ এর আমন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর (জুন ২০১৬), সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর (অক্টোবর ২০১৪), কাতার সফর (২০১২, ২০০৯), কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর (মে ২০১৬), ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর (ফেব্রুয়ারি ২০১৭) এ সকল দেশের সাথে আমাদের সম্পর্কের নবতর অধ্যায়ের সূচনা করার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে।

এই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুসমূহের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, জনশক্তি ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ৬২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২০০৯- ২০১৭ মেয়াদে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সাথে ৬২ টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

 ২০১৪ ও ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেন। ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক এক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। 

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দশ বছর

পার্বত্য চট্টগ্রাম

পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সমন্বিত সমাজ উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফ এর আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পের ৩য় পর্যায়ে ৩২০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ নিম্নরুপ:

৪০০০ পাড়াকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকার ১,৬৫,৩৪৩ পরিবারকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, পয়ঃব্যবস্থা ইত্যাদি মৌলিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

 প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র মেরামতসহ ৫,১০৯ জন
পাড়াকর্মীদের মৌলিক প্রশিক্ষণ, ৪৩৪২ জন পাড়াকর্মীদের সঞ্জিবনী প্রশিক্ষণ, ৪০৩ জন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ৩২,৮৪০ জনকে চাকুরীকালীন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

 শিক্ষা : প্রকল্পভুক্ত ৩-৫ বছর বয়সী ১,৭৩,১৬৫ জন শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুতকরণের লক্ষ্যে পাড়াকেন্দ্রে শিশু বিকাশ ও প্রাক-শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৪০০০ পাড়া কেন্দ্রে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।

 বর্তমানে ৪০০০ পাড়া কেন্দ্রে ৫৪,০০০ শিশু প্রি-স্কুলে অধ্যয়নরত। পাড়াকেন্দ্র থেকে ২ লক্ষের বেশি শিশু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

 এছাড়া পার্বত্য চট্রগ্রাম এলাকায় ক্ষুদ্র ও পশ্চাদপদ নৃগোষ্ঠির মধ্যে প্রতি বছর ১০০০ জন শিক্ষার্থীর খাদ্য, আবাসন, পোশাক, পরিচ্ছদ, শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে প্রাপ্তিসহ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করছে। বিদ্যালয়সমূহ থেকে এ পর্যন্ত ১১০০ শিক্ষার্থী এস,এস,সি পাশ করেছে।

স্বাস্থ্য : প্রতিরোধযোগ্য রোগের সংক্রমণ হ্রাস এবং এনিমিয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকার সকল শিশু, মহিলা ও গর্ভবর্তী মহিলাকে টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।


এছাড়াও পাড়াকেন্দ্রে ৬-২৩ মাস বয়সী ৯৪,৭২৪ জন শিশুদের জন্য ভিটামিন-মিনারেল পাউডার, কিশোরী ও গর্ভবর্তীদের আয়রন ট্যাবলেট, ১,২২,৪৩৫ জন প্রসুতি মায়েদের জন্য ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল বিতরণ, ৮১,৭১০ জন কিশোরীদের জন্য কৃমিনাশক বড়ি বিতরণ, ৫৩৪ জনকে DNI প্রশিক্ষণ ও ২০৪৫ জনকে MNHI প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

পানি ও পয় : ব্যবস্থা উন্নয়ন: প্রকল্প এলাকায় ১২০টি নলকূপ স্থাপন ও সংস্কার, ৫,৪২৩টি স্বল্পব্যয়ী স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা সরবরাহ, ১,৩৫০ জন কেয়ার টেকার প্রশিক্ষণ ও টুলবক্স বিতরণ এবং ১,২০৫টি হ্যান্ড ওয়াসিং ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে।

 উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য ৪১৭.০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ হতে ২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার জন্যে মোট ৭৬০৬.৩১ (১ম সংশোধিত) লক্ষ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই, ২০১৫-২০১৯ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসমূহ

২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বান্দরবান জেলায় ২৩৬টি, রাঙামাটি জেলায় ১২০টি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১২০টি ৬৫ওয়াট পিক ক্ষমতার সোলার হোম সিস্টেম সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়। ৪৪০ জন উপকারভোগীকে সোলার সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ২৪৪৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বান্দরবান জেলায় ২১২৪টি, রাঙামাটি জেলায় ১৭৫৩টি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৫৩৭টি ৬৫ ওয়াট পিক ক্ষমতার সোলার হোম সিস্টেম সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়। ৩৪০০ জন উপকারভোগীকে সোলার সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণের ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

সাজেক রুইলুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ শ্রেণিকক্ষের লক্ষ্যে ২৪টি ২৫০ ওয়াট পিক ক্ষমতার সোলার কমিউনিটি সিস্টেম সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়।

প্রকেল্পের আরডিপিপি‘তে আরও ৫০০০টি সোলার হোম সিস্টেম ৫৮৯০টি মোবাইল চার্জার এবং ১২ ওয়াট পিকের পরিবর্তে ৩২ ওয়াট পিকের ২৩১৫টি সোলার কমিউনিটি সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স উদ্বোধন।


তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দশ বছর

যুব ও ক্রীড়া

Under Processing.

সংস্কৃতি

Under Processing.

ধর্ম

Under Processing.

মুক্তিযুদ্ধ

Under Processing.

স্বরাষ্ট্র

Under Processing.

প্রতিরক্ষা

Under Processing.

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু

Under Processing.

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়

Under Processing.

ভূমি

Under Processing.

শ্রম ও কর্মসংস্থান

Under Processing.

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান

Under Processing.

তথ্য

Under Processing.

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা

Under Processing.

বস্ত্র ও পাট

Under Processing.

বাণিজ্য

Under Processing.

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

Under Processing.

শিল্প মন্ত্রণালয়

Under Processing.

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়/বিভাগ

Under Processing.

পুঁজিবাজার

Under Processing.

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ

Under Processing.

অর্থ মন্ত্রণালয়

Under Processing.

এ টু আই প্রকল্প

Under Processing.

ডাক ও টেলিযোগাযোগ

Under Processing.

বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

Under Processing. 

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়

Under Processing. 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ

Under Processing. 

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়

Under Progressing. 

খাদ্য মন্ত্রণালয়

Under Progressing. 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

Under Progressing. 

কৃষি

Under Progressing. 

পানি সম্পদ

Under Progressing. 

স্থানীয় সরকার

Under Progressing. 

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়

Under Progressing. 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

Under Progressing. 

রেলপথ

Under Progressing. 

সড়ক ও সেতু বিভাগ

Under Progressing. 

বিদ্যুৎ

Under Progressing. 

Saturday 16 February 2019

১৫ আগস্ট, শোক দিবস

১৫ আগস্ট ১৯৭৫: এক অজানা অধ্যায়

 
১৫ আগস্ট ১৯৭৫: এক অজানা অধ্যায়

যেকোনও বার্ষিকী, তা আনন্দের হোক আর বেদনার হোক; আমাদের পুরনো ঘটনা আর মানুষের কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রতি বছর যখন তারিখগুলো ঘুরে আসে, আমাদের মনে পড়ে কী ঘটেছিল সেই

দিন। কখনও কখনও আমরা অতীত নিয়ে বেশি চিন্তা না করে, সংক্ষিপ্ত স্মরণের পর ফিরে যাই দৈনন্দিন ভাবনায়।

আবার কখনও আমরা থমকে দাঁড়াই। অতীতের ঘটনা নিয়ে গভীর বিবেচনার স্বার্থেই আমাদের থামতে হয়। একজন লেখকের কাজ এটাই। অতীতে কী ঘটেছিল তা নিয়ে ভাবা, আর পুনর্মূল্যায়ন করা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার জন্য তেমনই একটা দিন। আগেও আমি বলেছি, ১৫ আগস্ট আসলে উইলিয়াম ফকনারের এক উক্তি আমার মনে পড়ে। উক্তিটা হলোঃ "অতীতের মৃত্যু হয় না কখনও, এমনকি অতীত বলে কিছু নেই।"

কোন কোন বছর আমি একটু থেমে সেদিনকার কথা স্মরণ করি। তারপর আবার নিজের কাজে ফিরে যাই। কিছু স্মৃতি মাথায় আটকে থাকে।

তবে এই বছর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়ের পাতা উলটে দেখব। সেই ইতিহাস কেবল বাঙালিদের নয়, আমার মতো আমেরিকানদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় সংঘটিত হয়েছিল এক হত্যাকাণ্ড।

সেই হত্যাকাণ্ড সম্ভব হয়ে উঠেছিল কয়েকটি ঘটনার ধারাবাহিকতায়। সে হত্যাকাণ্ডে কেবল কি বাংলাদেশিরাই জড়িত ছিল? নাকি তাদের উৎসাহিত করা হয়েছিল, এমনকি হত্যার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল?

বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্র, দুই দেশেই এমন কিছু মানুষ আছেন যারা হত্যাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির হাতিয়ার বানানোর বিপক্ষে। তারা মনে করেন, এরকম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় নেওয়া উচিত।

আজ আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সহিংসতার কথা স্মরণ করি। কিন্তু সে ঘটনার এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে আমাদের বোঝায় ঘাটতি রয়ে গেছে।

অনেকটাই এখন আমরা জানি। তারপরও এখন আমাদের হাতে এসেছে নতুন তথ্য। হয়ত এই তথ্য নতুন সূত্রের খোঁজ দেবে, আমাদের জানার পরিসর বিস্তৃত করবে।
অভ্যুত্থানের আগে, ঢাকায় এক বৈঠক

কিছু দিন আগে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে আমি এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেই। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সম্পর্কে ভাবছিলাম আমি। ভাগ্য ভালো যে আমরা দুইজনই জীবিত আছি।

তিন দশক আগে যেদিন তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল আমার, সেদিন তিনি আমার পাশে বসে নিচুস্বরে জানিয়েছিলেন, আমার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে। শুধু এটুকুই। তবে তাঁর চেহারা ছিল অত্যন্ত গম্ভীর।

আমরা একে অপরকে চিনতাম। খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল তা না। তবে তাঁর দুর্দান্ত এক সাহসী কর্মকাণ্ডের কথা জানতাম আমি। একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে তিনি যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেজন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করতাম। সেদিন সন্ধ্যায় আমি ঢাকায় তাঁর বাড়িতে গেলাম। ভদ্রলোক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমাকে এক আড্ডায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে অনেক ভিড় ছিল, একান্ত আলাপ করাটা ছিল কঠিন। পরদিন সন্ধ্যায় আবারও আসার অনুরোধ করলেন তিনি। আমি বললাম সময়মত চলে আসব।

অবশ্য সে কথা আমি রাখতে পারিনি, কারণ পরদিনই আমাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে রিপোর্ট করতে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেটাকে বিচার বলাটা ঠিক হবে না। আসলে সে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তার বন্ধু আবু তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যবস্থা করছিলেন। একসময় এই তাহেরই জিয়ার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।

আমি ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির জন্য রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলাম। ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব অঞ্চলের সংবাদমাধ্যমেই তাহেরের বিচার সংক্রান্ত খবরটি পুরোপুরিভাবে ধামাচাপা দেওয়া হলো। আমার করা একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিবিসির বাংলা সংস্করণে প্রথম তাহেরের বিচারের খবরটি প্রকাশ পায়।

ব্যাংককে রয়টার্সের অফিসে আমার প্রতিবেদন পাঠানোর একটা উপায় করেছিলাম। সেখান থেকে ওরা হংকং আর লন্ডনে আমার সম্পাদকদের কাছে পাঠিয়ে দিত। ঢাকা টেলেক্স অফিস থেকে আমার প্রতিবেদন আদান-প্রদান প্রক্রিয়া এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রাখা হলো। আমাকে তিনদিন ধরে আটকে রাখার পর ব্যাংককে পাঠিয়ে দেওয়া হল। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক, দুইদিক দিয়েই সম্পূর্ণ সেন্সরশিপ আরোপ করা হল।

ওই ভদ্রলোক কী বলতে চেয়েছিলেন তা আর শুনতে যাওয়া হয়নি আমার। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর আমি যখন একটি সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা যাই, আমি সিদ্ধান্ত নিই ওই লোকের সঙ্গে দেখা করব। আর কিছু না হোক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারার জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাইব। তবে এত বছর আগে তিনি আমাকে কী বলতে চেয়েছিলেন তা জানার জন্য খুব আগ্রহ হচ্ছিলো। আমি তাঁর অফিসে যোগাযোগ করার পর তিনি বললেন, আপনি এখুনি চলে আসুন।

আমি পৌঁছানোর পর তিনি আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ের সে দিনটিতে দেখা না করায় তিনি আমাকে খানিক তিরস্কার করলেন। বললেন, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আর সেই রাতেই আপনার গ্রেফতার হতে হলো? অবশেষে ক্ষমা মিলল। চা দেওয়া হলো। তাঁর আস্থাভাজন এক ব্যক্তি যেন আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন, তিনি তার ব্যবস্থা করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা আমাকে বলতে চেয়েছিলেন তা মনে আছে কিনা। জবাবে তিনি বললেন, ‘এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে।’ এরপর তিনি গম্ভীর হয়ে গেলেন।

পরবর্তী এক ঘণ্টা তিনি আমাকে এক গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী শোনালেন। তারপর কয়েকদিন ধরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা, দুপুর অথবা রাতের খাবার খেতে খেতে। তাঁর স্ত্রী ছিলেন আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী। স্বামীর কথার সত্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোথাও কোথাও নিজের স্মৃতি থেকে আরও কথা জানাচ্ছিলেন তিনি। এই হল সেই বৃত্তান্ত।

ঘটনাটা ছিল ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের ঠিক আগে।

তখনকার ঢাকার কূটনৈতিক মহলে ওই ভদ্রলোকের অনেক বন্ধু ছিল। ব্যবসার খাতিরেই এসব মানুষের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তিনি আমাকে বললেন, মার্কিন দূতাবাসে তখন তাঁর একজন বন্ধু ছিল। এক রাজনৈতিক কর্মকর্তা। তার নাম ফিলিপ চেরি। তাঁর কথায়, ফিলিপ চেরি ছিলেন এক সুদর্শন ও চমৎকার ব্যক্তিত্বের মানুষ। বাংলাদেশের জন্য তার মনে অনেক ভালবাসা। মাঝে মাঝে তাঁর গাড়িতে করে চেরিকে নিয়ে যেতেন নিজের কারখানাগুলোতে। ফিল চেরির মুখে বারবার শোনা যেত, বাংলাদেশ কি সুন্দর একটা দেশ!

১৯৭৫ সালের জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরুতে ফিলিপ চেরি ওই ভদ্রলোককে ফোন করে বলেন, তিনি তাঁর বাড়িতে একটি নৈশভোজের আয়োজন করতে পারেন কিনা। ভদ্রলোক সানন্দে রাজি হলেন। চেরি কি নির্দিষ্ট কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে চায়? চেরি তাঁকে বলল, সে চায় কেবল একজন অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হোক। তবে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে আসতে কোনও সমস্যা নেই। সেই অতিথি ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।

ভদ্রলোক জেনারেল জিয়াকে চিনতেন। তিনি জানালেন, ওই নৈশভোজ আয়োজন করতে পারলে তিনি খুশিই হবেন। চেরি কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বললেন। নৈশভোজের আয়োজন হলো। জেনারেল জিয়া তার স্ত্রী খালেদাসহ সেখানে পৌঁছালেন। ফিলিপ চেরিও তার স্ত্রীসহ সেখানে গেলেন। ওই নৈশভোজে এই তিন দম্পতির বাইরে আর কেউ ছিলেন না।

আমার বন্ধুটি জানান, অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগে নৈশভোজটি আয়োজিত হয়েছিল। তবে তাঁর স্ত্রীর স্মৃতি বলে, এটা দশ দিন আগের ঘটনা। দুই অতিথি তাঁর বাড়িতে পৌঁছানোর পরপরই পরিষ্কার হয়ে গেলো, তারা নিজেদের মধ্যেই আলাপ করতে এসেছে।

জেনারেল জিয়া ও ফিলিপ চেরি বাগানের ভেতরে গেল এবং খাবার পরিবেশনের আগ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলল। জিয়া ও চেরিকে দেখে মনে হলো তারা একে অপরের চেনা। নৈশভোজের পর তারা আরেকবার বাগানে গেল এবং আলোচনা করতে লাগল। ওই সময়ে দেখে মনে হয়েছিল তারা গালগল্প করছে। অবশ্য অভ্যুত্থানের পর ভদ্রলোক ও তাঁর পরিবারের উপলব্ধি হয় যে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পরদিন ভদ্রলোক এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি গাড়ি চালিয়ে গুলশানে ফিলিপ চেরির বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। তাঁর চোখে ছিল ক্ষোভের অশ্রু। তিনি প্রশ্ন করতে থাকেন, কীভাবে এমনটা হল। বারবার বলেন, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তাঁর নিজের মায়ের মতো ছিলেন। তারা তাকে মেরে ফেলেছে। কেন? পুরো পরিবারকে হত্যা করা নিয়ে তিনি ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত ছিলেন। বারবার জানতে চাইছিলেন, ‘কীভাবে এমনটা হলো?”

চেরির স্ত্রী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল, তাকে চা দিয়েছিল। চেরি তাকে বলছিল, “আমি জানি তুমি ওই পরিবারের খুব কাছের মানুষ ছিলে।” রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবসায়ী ভদ্রলোক চলে যান। এরপর তিনি আর চেরির দেখা পাননি। তাদের পরিবার রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা জানেন, জিয়া-চেরির সেই ডিনার কোনও সামাজিক সাক্ষাৎ ছিল না। তাঁরা ভালো করেই বুঝেছিলেন, সামরিক অভ্যুত্থানের সময় জিয়ার ভূমিকা কী ছিল, ১৫ আগস্ট মেজর ফারুক ও মেজর রশিদের সেই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের সময় সেনাবাহিনীকে তাদের বাধা দেওয়া থেকে বিরত রাখতে তিনি কী করেছিলেন।

অনেকেই বুঝতে পেরেছিল যে অভ্যুত্থানে জিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জেনারেল জিয়া বিরোধিতা করলে এই অভ্যুত্থান সম্ভবই ছিল না। তথ্য-প্রমাণ থেকেও বোঝা যায়, অভ্যুত্থানে মূল কারিগরের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিয়া। খন্দকার মুশতাক আহমেদের চেয়ে তার ভূমিকাই বড় ছিল।

পরবর্তী আরেক ঢাকা সফরে, এক সন্ধ্যায় চেরি-জিয়ার বৈঠক নিয়ে আলাপকালে ওই ব্যবসায়ী ভদ্রলোককে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, চেরি যে সে সময়ের ঢাকার সিআইএ স্টেশন প্রধান ছিল তা তিনি জানতেন কিনা। আমার কথা শুনে তিনি চমকে ওঠেন। বলেন, আমি ভেবেছিলাম সে দূতাবাসের কোনও রাজনৈতিক কর্মকতা।

চেরিই যে ছিল ঢাকায় তখনকার সিআইএ স্টেশন প্রধান, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, এবং আমি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আগের লেখাতেও এটা উল্লেখ করেছি । একদম নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমি। আমার সূত্র - বাংলাদেশে তখন নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্বয়ং।
কার হুকুমে?
তো যেটা বোঝা যাচ্ছে তা হল যে, সামরিক অভ্যুত্থানের প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ও আমেরিকার সিআইএ স্টেশন চিফের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছয় মাস আগেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্পষ্ট করে দূতাবাসের সবাইকে বলে দিয়েছিলেন যে মুজিব সরকার পতনের চেষ্টায় নিয়োজিত কারও সঙ্গে যেন যোগাযোগ না করা হয়।

১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে কিছু ব্যক্তির ক্রমাগত মিটিং হয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রার্থী ছিল। পরবর্তী কোনও এক নিবন্ধে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক আগে ফিলিপ চেরি ও জিয়াউর রহমান ঢাকায় কারও বাসায় বৈঠকে বসে। উপরমহলের সম্মতি না থাকলে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা কিংবা কথা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না চেরির। রাষ্ট্রদূত বোস্টার যেহেতু এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তার মানে তাকে অন্য কেউ নির্দেশনা দিয়েছিল। সিআইএ স্টেশন চিফ হয়তো ওয়াশিংটন কিংবা ল্যাংলিতে সিআইএ সদরদপ্তরের নির্দেশমতো কাজ করছিল।

ব্রিটিশ লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন তার বই ‘দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’-এ বাংলাদেশ নিয়ে একটি অধ্যায় রেখেছেন। তার মতে, ১৯৭৪ সালের আগস্টে নিক্সনের মৃত্যুর পর এই নির্দেশ দেওয়া ও অভ্যুত্থানের সমর্থন করার মতো সক্ষম একমাত্র একজনই ছিলেন। হিচেন তার বইয়ে লেখেন:

"রাষ্ট্রদূত বোস্টার বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার সিআইএ স্টেশন নেপথ্য কোনও ক্ষমতাশক্তির নির্দেশনায় কাজ করছে, যার সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ওয়াশিংটনের সম্পৃক্ততা ছাড়া এধরণের অপারেশন হত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্থহীন। আর সেখানে, ফোর্টি কমিটি [সিআইএর গোপন অপারেশনের নিয়ন্ত্রক] আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সুতো বাঁধা ছিল একজনের মুঠোতেই।"

হিচেনের মতে এই মুঠো ছিল হেনরি কিসিঞ্জারের।

ফিলিপ চেরি ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হাজির করে: মার্কিন সরকারের পক্ষে কে চেরিকে নির্দেশনা দিচ্ছিলো? তার এই নির্দেশনা কি ফোর্টি কমিটি থেকে দেওয়া হয়েছিল? নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা হেনরি কিসিঞ্জারের দল সরাসরি এই নির্দেশনা দেয়? পরবর্তী একটি নিবন্ধে এসব প্রশ্ন মীমাংসার চেষ্টা করা হবে। 


তথ্যসূত্র -ঢাকা ট্রিবিউন

২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবস

২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যা ২৬শে মার্চ তারিখে পালিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দেন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। 



পতাকা একেঁ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড চালানো হয়। এমতাবস্থায় বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই অনেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরবর্তিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানী জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়।


অপারেশন সার্চলাইট
অপারেশন সার্চলাইট ১৯৭১সালে ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী শাষকদের আদেশে পরিচালিত,যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ্‌ এর পরবর্তি অনুষঙ্গ। অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। 


স্বাধীনতার ঘোষণা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। কথিত আছে, গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (অর্থাৎ, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তত্কালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। ঘোষণাটি নিম্নরুপ:

    অনুবাদ: এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।
২৬শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক'জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ.হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৭শে মার্চ  পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার[১০] মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ঘোষণাপত্রটির ভাষ্য নিম্নরুপ:

    অনুবাদ: আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।

    আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।

    শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।
১৯৭১ সালে ২৭ মার্চের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে যা নয় মাস স্থায়ী হয়।
স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বেশ বর্ণাঢ্য ভাবে উদযাপন করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে উদযাপন শুরু হয়। ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। জাতীয় স্টেডিয়ামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও শরীরচর্চা প্রদর্শন করা হয়।

এই দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকে। পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। 

 

তথ্যসূত্র -উইকিপিডিয়া.

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস
বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ২২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।  এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন দেশটির প্রধান মাননীয় রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন।


পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ

 

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ:

    পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

    এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

    লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে। 

 

বাংলাদেশের স্বীকৃতি
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের মাধ্যমে ৯ মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলা দেশ (পরবর্তীতে একটি শব্দ হিসাবে ব্যবহার শুরু করা হয়)নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সকল দেশ স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। 

 

বিজয় দিবস উৎযাপন

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রিয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ, গণমাধ্যম ইত্যাদি বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়। এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে, এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। এই দিনে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।  

 

বিজয় দিবসের বিশেষ কিছু ঘটনা

    ১৯৭১: স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের নাম করণ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
    ১৯৭২: গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংবিধান প্রকাশিত হয়।
    ১৯৭২: ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গ্যাজেটের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব ঘোষণা করা হয়।
    ১৯৯৬: ২৫ বছর পূর্তি উৎসব করা হয়।
    ২০১৩: জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭,১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল এবং সবুজ ব্লক নিয়ে একত্রে জড়ো হয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মানব পতাকার নতুন বিশ্ব রেকর্ড করে।

 

তথ্যসূত্র -উইকিপিডিয়া.

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে গেৱিলাযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ ও ই.পি.আর.-কে হত্যা করে এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙালিদের তৎকালীন জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পার্বত্য চট্টগ্ৰামেৱ কালুৱঘাট বেতাৱ কেন্দ্ৰো থেকে ৮ম পূৰ্ব বেঙ্গল ৱেজিমেন্টেৱ উপ প্ৰধান মেজৱ জিয়াউর ৱহমান ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম. এ. হান্নান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ 

পরিকল্পিত গণহত্যার মুখে সারাদেশে শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধযুদ্ধ; জীবন বাঁচাতে কয়েক হাজাৱ আওয়ামী লীগেৱ নেতাৱা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্য এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কব্জা থেকে স্বাধীন করতে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে গেৱিলা বাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে নুন্যতম অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে, তখন তারা গেৱিলা বাহিনীর কাছে পরাজয়ের লজ্জা এড়াবার জন্য এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক সংঘর্ষে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ৩ ডিসেম্বর ভারতে বিমান হামলার মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

অত:পর ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যুদ্ধ বিৱতীৱ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আক্শ্মীকভাবে যুদ্ধবিৱতী বদলে আত্মসমর্পণের দলীল সই করে। এসময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ থেকে দলীলে সই করেন আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান হয়। ভাৱতীয় বাহিনী বাংলাদেশ আৱ প্ৰায় তিনি মাসেৱও অধিক সময় ৱয়ে যায়। অবশেষে অনেক কূটনৈতিক চাপেৱ মুখে ভাৱত বাংলাদেশ ত্যাগ কৱতে বাধ্য হয়। 


পটভূমি
১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হয় এবং ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় ভারত। নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তান দুই হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত দুটি প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত হয় - পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে অবস্থিত এ দুটি অংশের মধ্যে মিল ছিল কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মে। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে বঞ্চিত হতে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস।  

১৯৭০-এর নির্বাচন
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু'জন প্রধানমন্ত্রী। "এক ইউনিট কাঠামো" নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। মার্চের ৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম অংশের এই দুই নেতা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতিকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না। মুজিব সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণে তিনি ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগেই বাস্তবায়নের জন্য চার দফা দাবি পেশ করেন:

    অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
    সামরিক বাহিনীকে সেনানিবাসে ফিরে যেতে হবে।
    নিহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধান করতে হবে।
    ২৫ মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

শেখ মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করলেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"। তাঁর এই ভাষণ গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উন্মাতাল করে তোলে।

শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের অধিকার অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার ক্ষমতা কোনো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। যদিও ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং সামরিক বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বুনতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৫ দিনের হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর আহবানে সারা পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে যায়। সামরিক সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, কিন্তু এতে আন্দোলন প্রশমিত হয়নি। ৫ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।
মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক

সারা দেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল, তখন ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবের সঙ্গে সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু একই সঙ্গে সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। বেলুচিস্তানের কসাই হিসেবে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়, কিন্তু কোন বাঙালি বিচারপতি তাঁকে শপথ পাঠ করাতে রাজি হন নি। পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হতে থাকে। ১০ থেকে ১৩ মার্চের মধ্যে পাকিস্তান এয়ারলাইন্স তাদের সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করে পূর্ব পাকিস্তানে জরুরীভিত্তিতে "সরকারি যাত্রী" পরিবহণ করতে। এই "সরকারি যাত্রী"দের প্রায় সবাই ছিল সাদা পোশাকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সেনা। এমভি সোয়াত নামে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই একটি পাকিস্তানি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। কিন্তু বন্দরের নাবিক ও শ্রমিকেরা মালামাল খালাস করতে অস্বীকার করে। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের একটি দল বাঙালি প্রতিবাদকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে, যার মাধ্যমে শুরু হয় বাঙালি সৈনিকদের বিদ্রোহ। অনেক আশা সত্বেও মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সফল হয় নি। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে বাঙালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত প্রদান করে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করেন।
গণহত্যা ও জনযুদ্ধের সূত্রপাত
মূল নিবন্ধ: ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যা

২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের গণহত্যাযজ্ঞ। এশিয়া টাইমসের ভাষ্য অনুযায়ী,

    সামরিক বাহিনীর বড় বড় অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন "তিরিশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করো, তখন দেখবে বাকিরা আমাদের হাত চেটে খাবে।" সে পরিকল্পনা মতোই ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট আরম্ভ করে যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেয়া। এরই অংশ হিসাবে সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্র করে হত্যা করা হয়, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয় এবং সারা বাংলাদেশে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের খবর যাতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে না পৌঁছায় সে লক্ষ্যে ২৫ মার্চের আগেই বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকা পরিত্যাগে বাধ্য করা হয়। তারপরও সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করে ওয়াশিংটন পোস্টের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে এই গণহত্যার খবর জানিয়েছিলেন। যদিও এই হত্যাযজ্ঞের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা, বাঙালি হত্যা পুরো দেশজুড়ে চালানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছিল তাদের বিশেষ লক্ষ্য। একমাত্র হিন্দু আবাসিক হল - জগন্নাথ হল - পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এতে ৬০০ থেকে ৭০০ আবাসিক ছাত্র নিহত হয়। যদিও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেছে, তবে হামিদুর রহমান কমিশনের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করেছিলো। জগন্নাথ হল এবং অন্যান্য ছাত্র হলগুলোতে পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞের চিত্র ভিডিওটেপে ধারণ করেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনলজি (বর্তমান বুয়েট) এর প্রফেসর নূরুল উলা।

পুরো বাংলাদেশেই হিন্দু এলাকাগুলো বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মধ্যরাতের আগেই ঢাকা পুরোপুরি জ্বলছিল, বিশেষভাবে পূর্ব দিকের হিন্দুপ্রধান এলাকাগুলো। ২ আগস্ট, ১৯৭১ টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, "হিন্দুরা, যারা মোট শরণার্থীদের তিন-চতুর্থাংশ, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ক্রোধ ও আক্রোশ বহন করছিল"।
স্বাধীনতার ঘোষণা

টেক্সাসে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নথি সংগ্রাহক মাহবুবুর রহমান জালাল বলেন, “বিভিন্ন সূত্র ও দলিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই প্রমাণিত হয় যে, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যা ছিল তাঁর বা অন্য কারো হয়ে ঘোষণা দেয়ার অনেক পূর্বে। ২৫ মার্চে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক ভেঙে গেলে ইয়াহিয়া গোপনে ইসলামাবাদে ফিরে যান। এবং গণহত্যা চালানোর পর[২৭] পাকিস্তানি সেনারা সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুসহ তার পাঁচ বিশ্বস্ত সহকারীকে গ্রেপ্তার করে।  গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে যান। মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপঃ

    এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

বিভিন্ন মাধ্যমে ঘোষণাপত্র

২৫-শে মার্চ থেকে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত সকল সাংবাদিককে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ২ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ করে রাখে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র  সেখান থেকে ঘোষণা হয় যে “শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে সাড়ে সাত কোটি জনগণকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন”। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে স্বাধীনতার মূল ঘোষক কে ছিলেন তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে ১৯৮২ সালে সরকারিভাবে একটি ইতিহাস পুস্তক প্রকাশিত হয় যাতে ৩টি বিষয় উপস্থাপিত হয়।
    শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঘোষণাপত্র লিখেন ২৫ মার্চ মাঝরাত কিংবা ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে।
    শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাপত্রটি ২৬ তারিখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। কিন্তু সীমিতসংখ্যক মানুষ সেই সম্প্রচারটি শুনেছিল।
    পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হয়ে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করে, ফলে বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে পারে। ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপঃ
    On behalf of our great national leader, supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman do hereby proclaim the independence of Bangladesh. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is sole leader of elected representatives of 75 million people of Bangladesh. I therefore appeal on behalf of our great leader Sheikh Mujibur Rahman to the government of all democratic countries of the world specially big world part and neighboring countries to take effective steps to stop immediately. The awful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan. The legally elected representatives of the majority of the people as repressionist, it is cruel joke and contradiction in terms which should be fool none. The guiding principle of a new step will be first neutrality, second peace and third friendship to all and anonymity to none. ─ May Allah help us, Jai Bangla.  



অস্থায়ী সরকার গঠন
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা (বর্তমানে জেলা) বৈদ্যনাথতলার অন্তর্গত ভবেরপাড়া (বর্তমান মুজিবনগর) গ্রামে। শেখ মুজিবুর রহমান এর অনুপস্থিতিতে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পিত হয় তাজউদ্দিন আহমদের উপর।[৩৩] বাংলাদেশের প্রথম সরকার দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের সামনে শপথ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করে। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে ২৬ মার্চ হতে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়।  


যুদ্ধক্ষেত্রের কাঠামো
আরও দেখুন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টরসমূহের তালিকা
এগারোটি সেক্টর

স্বাধীনতা যুদ্ধে গেরিলাদের প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধগুলো ছিল পরিকল্পনাহীন ও অপ্রস্তুত। ২৬শে মার্চ সারা দেশে প্রতিরোধ শুরু হয় এবং এপ্রিলের শুরুতেই প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু অস্ত্রপ্রাপ্তি ও প্রশিক্ষণ - এই দুইয়ের ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই পরিকল্পিত রূপ পেতে পেতে জুন মাস পার হয়ে যায়। ১১ জুলাই বাংলাদেশের সামরিক কমান্ড তৈরি করা হয়। কর্নেল (অবঃ) মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীকে বাংলাদেশ বাহিনীৱ সৰ্বাধীনায়ক, বাংলাদেশকে সর্বমোট ১১টি সেক্টরে[৩৫] ভাগ করা হয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রতিটি সেক্টরের জন্যে একজন করে অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়।

১নং সেক্টর
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী নদী পর্যন্ত
মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল - জুন)
মেজর রফিকুল ইসলাম (জুন-ফেব্ৰুয়াৱী)
২নং সেক্টর
নোয়াখালী জেলা, কুমিল্লা জেলার আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত এবং ফরিদপুর ও ঢাকার অংশবিশেষ
মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)
মেজর এ.টি.এম. হায়দার (সেপ্টেম্বর-ফেব্ৰুয়াৱী)
৩নং সেক্টর
সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশোরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ
মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)
মেজর এ.এন.এম. নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর-ফেব্ৰুয়াৱী)
৪নং সেক্টর
সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট-ডাউকি সড়ক পর্যন্ত
মেজর সি.আর. দত্ত
৫নং সেক্টর
সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সিলেট জেলার সমগ্র উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল
মীর শওকত আলী
৬নং সেক্টর
সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা
উইং কমান্ডার এম.কে. বাশার
৭নং সেক্টর
দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা
মেজর কাজী নুরুজ্জামান
৮নং সেক্টর
সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অধিকাংশ এলাকা এবং দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের উত্তরাংশ
মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (এপ্রিল- আগস্ট)
মেজর এম.এ. মনজুর (আগস্ট-ফেব্ৰুয়াৱী)
৯নং সেক্টর
দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা
মেজর এম.এ. জলিল (এপ্রিল-ডিসেম্বর প্রথমার্ধ)
মেজর জয়নুল আবেদীন (ডিসেম্বরের অবশিষ্ট দিন)
১০নং সেক্টর
কোনো আঞ্চলিক সীমানা নেই। নৌবাহিনীর কমান্ডো দ্বারা গঠিত। শত্রুপক্ষের নৌযান ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হত
১১নং সেক্টর
কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা এবং নগরবাড়ি-আরিচা থকে ফুলছড়ি-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদী ও তীর অঞ্চল
মেজর জিয়াউর রহমান (জুন - অক্টোবর)[৩৬]
মেজর আবু তাহের (অক্টোবর-নভেম্বর)
স্কোয়ড্ৰণ লীডাৱ এম হামিদুল্লাহ খান (নভেম্বর-ফেব্ৰুয়াৱী)

    ১০ নং সেক্টরটি ছিল কমান্ডার-ইন-চিফের (সি-ইন-সি) সরাসরি তত্ত্বাবধানে, যার মধ্যে নৌ-বাহিনী ও সি-ইন-সির বিশেষ বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৩৭] তবে উপযুক্ত কোন কর্মকর্তা ছিলেন না বলে ১১ নং সেক্টরের (নৌ সেক্টর) কোন সেক্টর অধিনায়ক ছিল না; এ সেক্টরের গেৱিলাৱা যখন যে সেক্টরে অভিযান চালাতেন, তখন সে সেক্টরের সেক্টর অধিনায়কের অধীনে থাকতেন।[৩৮] গেৱিলাদেৱ বেশির ভাগ প্রশিক্ষণ শিবির ছিল সীমান্ত এলাকায় এবং ভারতের সহায়তায় গেৱিলা প্রশিক্ষণ লাভ করত। সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করার জন্যে তিনটি ব্রিগেড (১১ ব্যাটালিয়ন) তৈরি করা হয়। এছাড়াও প্রায় ১,০০০ গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের ভেতরে নিয়মিত বিভিন্ন অভিযানে পাঠানো হতো।

আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক নৌ-আক্রমণ। ইতিহাসে এ আক্রমণ অপারেশন জ্যাকপট নামে পরিচিত।  


পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বিজয়
ডিসেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটে; প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।


৯ ডিসেম্বর এক বার্তায় গভর্নর মালিক পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতিকে জানান, ‘সামরিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। পশ্চিমে শত্রু ফরিদপুরের কাছে চলে এসেছে এবং পূর্বে লাকসাম ও কুমিল্লায় আমাদের বাহিনীকে পাশ কাটিয়ে মেঘনা নদীর ধারে পৌঁছেছে। বাইরের সাহায্য যদি না আসে, তবে শত্রু যেকোনো দিন ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে যাবে। পুনরায় আপনাকে বলছি, আশু যুদ্ধবিরতি ও রাজনৈতিক সমাধানের কথা বিবেচনা করুন।’ এরপর ১০ ডিসেম্বর গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মুখ্য সচিব পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তা মুজাফফর হোসেন ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে ‘আত্মসমর্পণের’ আবেদন হস্তান্তর করেন।[৪১] এতে অবশ্য কৌশলে আত্মসমর্পণ শব্দটি বাদ দিয়ে অস্ত্রসংবরণ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এই আবেদনে আরো লেখা ছিল,

‘যেহেতু সংকটের উদ্ভব হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, তাই রাজনৈতিক সমাধান দ্বারা এর নিরসন হতে হবে। আমি তাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির দ্বারা অধিকারপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানাই। আমি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাই।’

এই আবেদন ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি পল মার্ক হেনরির হাতে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি মহলে বার্তাটি মালিক-ফরমান আলী বার্তা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরদিন তা আবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্যরা ঢাকা ঘেরাও করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্যে আহবান করে। মিত্রবাহিনী কর্তৃক গভর্নর হাউজে (বর্তমান বঙ্গভবন) বোমাবর্ষণের কারণে গভর্নর মালিকের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের পুতুল সরকারও ইতোমধ্যে পদত্যাগ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমান হোটেল শেরাটন) আশ্রয় নেয়। সময় থাকতে শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে আকাশ থেকে অনবরত প্রচারপত্র ফেলা হতে থাকে।  


অবশেষে নিয়াজির অনুরোধে ১৫ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ভারতীয় বিমান আক্রমণ স্থগিত রাখা হয়। পরদিন সকালে বিমান আক্রমণবিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার কিছু আগে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের প্রতিনিধি জন কেলির মাধ্যমে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আরও ছয় ঘণ্টার জন্য বাড়িয়ে দিয়ে ভারতের একজন স্টাফ অফিসার পাঠানোর অনুরোধ জানান যাতে অস্ত্রসমর্পণের ব্যবস্থাদি স্থির করা সম্ভব হয়। এই বার্তা পাঠানোর কিছু আগে অবশ্য ভারতীয় মেজর জেনারেল নাগরার বাহিনী কাদের সিদ্দিকীর মিলিশিয়া বাহিনীকে সঙ্গে করে মিরপুর সেতুতে হাজির হন এবং সেখান থেকে নাগরা নিয়াজিকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। নিয়াজির আত্মসমর্পণের ইচ্ছা ব্যক্ত হওয়ার পর সকাল ১০:৪০ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে নাগরার বাহিনী ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাদি চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব মধ্যাহ্নে ঢাকায় এসে পৌঁছান। বিকেল চারটার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ মোট চার ব্যাটালিয়ন সৈন্য ঢাকায় প্রবেশ করে। সঙ্গে কয়েক সহস্র মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার জনবিরল পথঘাট ক্রমে জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে ‘জয় বাংলা’ মুখরিত মানুষের ভিড়ে। বিকেল চারটায় ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম-কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, বাংলাদেশের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল করিম খোন্দকার এবং ভারতের অপরাপর সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধিগণ ঢাকায় অবতরণ করেন। কিছুক্ষণ পরেই ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব ও পশ্চিম উভয় রণাঙ্গনে ভারতের পক্ষ থেকে এককভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন।[৪০]

১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতার সামনে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। প্রায় ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের মানুষের বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় ধরা দেয় যুদ্ধ শুরুর নয় মাস পর। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করলেও সারা দেশে সকল পাকিস্তানি সৈন্যকে আত্মসমর্পণ করাতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণতম প্রান্তে প্রবেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত।  


তথ্যসূত্র -উইকিপিডিয়া.

২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন

রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ (২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন এর দিন যা ঘটেছিল )



ঢাকা: ২০ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ঘোষনা আসে পরদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে। এদিকে ২১ ফেব্রুয়ারী ছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পূর্ব ঘোষিত হরতাল। হরতালকে প্রতিহত করতেই এই ১৪৪ ধারা জারী করা হয়।

পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকেই হরতাল সফল করার প্রস্তুতি নেয়া হয় কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের এ ঘোষনার কারনে ছাত্র নেতারা হতাশ হয়ে পড়েন। সে সময় তারা হরতাল বাতিল ও ১৪৪ ধারা না ভঙার সিদ্ধান্ত নেন। রাত ১০ টার দিকে এই সিদ্ধান্তের কথা মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়। একই দিকে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মপরিষদের সদস্য নন এমন কয়েকজন নেতা কে জানিয়ে দেয়া হয় যে, রাতেই তৎকালীন ঢাকা হলের পুকুড়ের পূর্ব পাড়ের সিড়িতে জরুরী গোপন বৈঠক হবে।

রাত ১২ টায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন : গাজিউল হক (আইনজীবী), হাবিবুর রমান (বিচার পতি) মোহাম্মদ সুলতান, এম,আর আখতার মুকুল, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মোমিন, এস এ বারী, সৈয়দ কামরুদ্দীন হোসেইন শহুদ, আনোয়ারুল হক খান, মঞ্জুর হোসেন ও আনায়ার হোসেন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পরের দিন আমতলায় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন গাজিউল হক। যদি তিনি গ্রেফতার হন তবে সভাপতিত্ব করবেন এম আর অখতার মুকুল এবং তাকেও যদি গ্রেফতার করা হয় তবে সভাপতিত্ব করবেন কামরু উদ্দীন শহুদ। এ সময় আরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, সভাপতি হিসাবে গাজিউল হক ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য রাখবেন এবং ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে সিদ্ধান্ত জানিয়ে সভার কাজ শেষ করবেন।

২১ ফেব্রুয়ারী
২১ ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার, ১৯৫২ সাল। ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরদিন সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। শুধু বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মাঠটিতে সকাল থেকে কয়েক হাজার পুলিশ জামায়েত হতে থাকে। সঙ্গে থাকে পুলিশের স্পেশাল টিয়ার গ্যাস স্কোয়াড।

সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট মিছিল এসে জমা হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে। তখন পর্যন্ত পুলিশ কোন বাধ দেয় নি। চার পাশের বিভিন্ন হলের ছাত্ররা ধীরে ধীরে এসে জমা হতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ১০ হাজারে। চারদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের ’রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান। পুলিশ তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে নির্দেশের জন্য অপেক্ষায় ছিল।

এসবের মধ্যেই গাজিউল হককে সভাপতি করে সভা শুরু হয়। প্রথম বক্তব্য রাখেন সর্বদলীয় কর্ম পরিষদেও সদস্য শামসুল হক, তিনি ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে বক্তব্য রাখেন। যদিও তিনি বক্তব্যের শেষে আন্দোলনের প্রতি পূর্ন সমর্থন ব্যক্ত করেন। এরই মধ্যে খবর আসে, লালবাগ এলাকায় স্কুল শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠি চার্জ করছে। ফলে উত্তেজনা তখন চরমে ওঠে।এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক আব্দুল মতিন এবং সভাপতি গাজিউল হক উভয়েই ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। চার দিক কাপিয়ে শ্লোগান ওঠে ১৪৪ ধারা মানি না , মানবো না।

এই শ্লোগান চলার সময় আবদুস সামাদ আজাদ কী ভাবে ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে তার একটি প্রস্তাব পেশ করেন। এ প্রস্তাব কে বলা হয় বিখ্যাত ১০ জনী মিছিল। তার মতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী একত্রে মিছিলে নামলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই প্রতি দফায় ১০ জন করে রাস্তায় মিছিল বের করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী এ বক্তব্য সমর্থন করেন এবং কলাভবনের গেট খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।

এরপর শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের ১০ জনের মিছিল। প্রথম দলের নেতৃত্বে ছিলেন হাবীবুর রহমান (পরবর্তী কালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচার পতি ও তত্ত্বাবধায়ক প্রধান উপদেষ্টা এবং পরে রাষ্ট্রপিত)। দ্বিতীয় দলে ছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ ও ইব্রাহীম তাহা। তৃতীয় দলে আনোয়ারুল হক খান এবং আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খান। এই ১০ জনের মিছিলে যারা গ্রেফতার হচ্ছিল তাদের তালিকা তৈরীর দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ সুলতান এবং কাজী আজাহার। চতুর্থ দফায় মেয়েদের একটি মিছিল স্বেচ্ছায় কারাবরনের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমে আসার পরপরই ছাতদের অনেক গুলো মিছিল একে একে বের হয়ে আসতে শুরু করে।

এমন সময় পুলিশ আকস্মিক ভাবে মিছিলের উপর লাঠিচার্জ ও অবিরাম কাদানো গ্যাস নিক্ষেপ করতে শুরু করে। কাদানো গ্যাসের ধোয়ায় ছেয়ে যায় চাদিক। ছাত্ররা দৌড়ে কলা ভবনের পুকুড়ে এসে রোমাল ভিজিয়ে চোখ মুছে আবার মিছিলে যোগ দেয়। এমনি সময়ে একটি টিয়ারশেল সরাসরি গাজিউল হকের বুকে এসে আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলায় মেয়েদের কমন রুমে তাকে রেখে আসা হয়। বেলা প্রায় ২টা কলাভবন এলাকায় ছাত্র-পুলিশ সংঘর্স চলতে থাকে।

তখ নপর্যন্ত ঢাকার অন্যান্য স্থানে সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও বিশ্বদ্যিালয় এলাকায় একদিকে চলতে থাকে পুরিশের লাঠিচার্জ আর আরেক দিকে ছাত্রদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। এ পরিস্থিতে ছাত্ররা যতায়তের সুবিধার জন্য কলা ভবন ও মেডিকের কলেজ হাসপাতালের মধ্যবর্তী দেয়াল ভেঙে দেয়। ফলে কিছুক্ষনের মধ্যেই পুলিমের সঙ্গে ছাতদের সংঘর্ষের দিক পরিবর্তিত হয়। ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে সংঘর্ষ। এ সময় পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচর্জে আহত হন বহু ছাত্র।

এমনই সময় কোন পূর্ব সংকেত ছাড়াই সশস্র পুলিশ জেলা মেজিস্ট্রেট কোরেশির নির্দেশে দৌড়ে এসে জগন্নাথ হল প্রাঙ্গনে অবস্থান নিয়ে গুলি ফায়ার করে। চারদিকে টিয়ার গ্যাসের ধোয়ার ভেতর কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিছু তাজা পাণ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, অনেক আহত হয়, বাকিরা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। তখন সময় বেলা ৩ টা ১০মিনিট আর দিনটি ২১ ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার।

একটি লাশের মাথার অর্ধেকটাই গুলিতে ্্উড়ে যায়। পরে যানা যায়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবুল বরকত। সে সময় পর্যন্ত ঘটনাস্থলে নিহতের সংখ্যা ছিল ২ এবং আহত ৯৬। সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে মারা যান আরো দুজন। এরা হলেন শহীদ জব্বার ও রফিক উদ্দিন।

২১ ফেব্রুয়ারীর গুলিবর্ষনে শহীদ হওয়া ৪ জনের মধ্যে তিনজন ছাত্র। এরা হলেন বরকত, জব্বার, ও রফিক উদ্দিন। আপর জন শহীদ সালাম যিনি বাদামতলী একটি প্রেসের কর্মচারী ছিলেন। তাছাড়া অহিউল্লাহ নামে ৯ বছরের একটি শিশু পুলিশের গুরিতে মারা যায়।

উল্লেখ্য, অব্দুস সালাম ২১ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙের মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিমের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একমাসসের অধিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর ১৯৫২ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি মারা যান।

ছাত্রদে মিছিলে পুলিশের গুরিবর্ষনের ঘটনা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার সাধারণ জনতা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে জড়ো হতে থাকে। গুলি বর্ষনের সংবাদ আইন পরিষদে পৌছালে ধীরৈন্দ্র নাথ দত্তের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার ছয় জন আইন পরিষদ সদস্য আইন পরিষদ মূলতবী করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আহত ছাত্রদের দেখতে যাবার জন্য নুরুল আমীনকে অনুরোধ করেন। সরকারী দলের সদস্য আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশও এই প্রস্তাবের সপক্ষে উচ্চকন্ঠ হন। কিন্তু নূরুল আমীন সকল দাবি উপেক্ষা করে আইন পরিষদের অধিবেশন চালানোর নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার সদস্যরা পরিষদ ওয়াক আউট করেন। রাতের বেলা ছাত্র নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে ঢাকা শহরের প্রতিটি মসজিদে ও কাবে পরদিন সকালে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়েত হবার আহবানসম্বলিত লিফলেট বিলি করা হয়। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারী করে সকল সভা- সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।



একুশে ফেব্রুয়ারি কী করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো

 
একুশে ফেব্রুয়ারি কী করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো
আমাদের বাংলা ভাষার জন্য এক দারুণ ব্যাপার ঘটল সেদিন। দিনটি ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেসকোর ৩০তম অধিবেশন বসে। ইউনেসকোর সেই সভায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। ফলে পৃথিবীর সব ভাষাভাষীর কাছে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পায়। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা লাভ করে বিশেষ মর্যাদা। ঠিক পরের বছর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনের ঘটনা জানতে হলে আমাদের একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা আন্দোলনের দিন। প্রতিবছরই মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিশ্বে অনেক দেশে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা রাজ্যে ‘বাংলা ভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি।

২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করার আগে, এই দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দাবি শোনা যায়, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ দাবি তোলা হয়। এ রকম আরও কিছু ব্যক্তিগত ও বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের কথা আমরা জানতে পারি। তবে এ বিষয়ে প্রথম সফল উদ্যোক্তারা হলেন কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী প্রথমে ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ নামে একটি দিবস ঘোষণার প্রস্তাব উপস্থাপন করে। সেখানে তাঁরা বলেন, ‘বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেটা ছিল তাদের ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আজকের পৃথিবীতেও অনেক জাতি-গোষ্ঠীর ভাষাও একই সমস্যা ও বিপদের মধ্যে আছে।’ কাজেই মাতৃভাষা দিবসের দাবিটি খুবই ন্যায়সংগত।

মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠীর এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন সাত জাতি ও সাত ভাষার ১০ জন সদস্য। তাঁরা হলেন অ্যালবার্ট ভিনজন ও কারমেন ক্রিস্টোবাল (ফিলিপিনো), জ্যাসন মোরিন ও সুসান হজিন্স (ইংরেজি), ড. কেলভিন চাও (ক্যান্টনিজ), নাজনীন ইসলাম (কা-চি), রেনাটে মার্টিনস (জার্মান), করুণা জোসি (হিন্দি) এবং রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম (বাংলা)। জাতিসংঘ মহাসচিবের অফিস থেকে এই পত্রপ্রেরকদের জানিয়ে দেওয়া হয়; বিষয়টির জন্য নিউইয়র্কে নয়, যোগাযোগ করতে হবে প্যারিসে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি-বিষয়ক সংগঠন ইউনেসকোর সঙ্গে। জাতিসংঘের কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তা হাসান ফেরদৌসেরও এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা ছিল সে সময়।

এরপর প্রায় এক বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ইউনেসকো। কানাডা প্রবাসী বাঙালি আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম (যাঁরা মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠীর সদস্য) এ বিষয়ে ইউনেসকোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন। প্রথমে টেলিফোনে এবং পরে চিঠিতে। ১৯৯৯ সালের ৩ মার্চ ইউনেসকো সদর দপ্তরের ভাষা বিভাগের কর্মকর্তা আন্না মারিয়া মেজলোককে রফিকুল ইসলাম একটি চিঠিতে জানান যে ‘২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার তোমাদের অনুরোধটি বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।’

কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন কর্মকর্তার কাছে এই প্রথম বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।

আন্না মারিয়া আরও জানান, ‘বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে উত্থাপনের কোনো সুযোগ নেই, ইউনেসকোর পরিচালনা পরিষদের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের মাধ্যমে সভায় এটি তুলে হবে।’ ইউনেসকো সদর দপ্তরের ভাষা বিভাগের কর্মকর্তা মারিয়া রফিকুল ইসলামকে ইউনেসকো পরিচালনা পরিষদের কয়েকটি সদস্য দেশের ঠিকানাও পাঠিয়ে দেন। এতে বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, ফিনল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির নাম ছিল। ইউনেসকো সাধারণ পরিষদে বিষয়টি আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হলে কয়েকটি সদস্য দেশের পক্ষে প্রস্তাব পেশ করা জরুরি। তখন হাতে সময় ছিল খুবই কম। কেননা অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই সাধারণ পরিষদের সভা বসবে।

 

তথ্যসূত্র -উইকিপিডিয়া.

 

 

Contact Us

Name

Email *

Message *

Pageviews from the past week

They Love Us!

Protected by Copyscape

Like Us On Facebook