১৫ আগস্ট ১৯৭৫: এক অজানা অধ্যায়
যেকোনও বার্ষিকী, তা আনন্দের হোক আর বেদনার হোক; আমাদের পুরনো ঘটনা আর মানুষের কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রতি বছর যখন তারিখগুলো ঘুরে আসে, আমাদের মনে পড়ে কী ঘটেছিল সেই
দিন। কখনও কখনও আমরা অতীত নিয়ে বেশি চিন্তা না করে, সংক্ষিপ্ত স্মরণের পর ফিরে যাই দৈনন্দিন ভাবনায়।
আবার কখনও আমরা থমকে দাঁড়াই। অতীতের ঘটনা নিয়ে গভীর বিবেচনার স্বার্থেই আমাদের থামতে হয়। একজন লেখকের কাজ এটাই। অতীতে কী ঘটেছিল তা নিয়ে ভাবা, আর পুনর্মূল্যায়ন করা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার জন্য তেমনই একটা দিন। আগেও আমি বলেছি, ১৫ আগস্ট আসলে উইলিয়াম ফকনারের এক উক্তি আমার মনে পড়ে। উক্তিটা হলোঃ "অতীতের মৃত্যু হয় না কখনও, এমনকি অতীত বলে কিছু নেই।"
কোন কোন বছর আমি একটু থেমে সেদিনকার কথা স্মরণ করি। তারপর আবার নিজের কাজে ফিরে যাই। কিছু স্মৃতি মাথায় আটকে থাকে।
তবে এই বছর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়ের পাতা উলটে দেখব। সেই ইতিহাস কেবল বাঙালিদের নয়, আমার মতো আমেরিকানদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় সংঘটিত হয়েছিল এক হত্যাকাণ্ড।
সেই হত্যাকাণ্ড সম্ভব হয়ে উঠেছিল কয়েকটি ঘটনার ধারাবাহিকতায়। সে হত্যাকাণ্ডে কেবল কি বাংলাদেশিরাই জড়িত ছিল? নাকি তাদের উৎসাহিত করা হয়েছিল, এমনকি হত্যার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল?
বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্র, দুই দেশেই এমন কিছু মানুষ আছেন যারা হত্যাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির হাতিয়ার বানানোর বিপক্ষে। তারা মনে করেন, এরকম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় নেওয়া উচিত।
আজ আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সহিংসতার কথা স্মরণ করি। কিন্তু সে ঘটনার এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে আমাদের বোঝায় ঘাটতি রয়ে গেছে।
অনেকটাই এখন আমরা জানি। তারপরও এখন আমাদের হাতে এসেছে নতুন তথ্য। হয়ত এই তথ্য নতুন সূত্রের খোঁজ দেবে, আমাদের জানার পরিসর বিস্তৃত করবে।
দিন। কখনও কখনও আমরা অতীত নিয়ে বেশি চিন্তা না করে, সংক্ষিপ্ত স্মরণের পর ফিরে যাই দৈনন্দিন ভাবনায়।
আবার কখনও আমরা থমকে দাঁড়াই। অতীতের ঘটনা নিয়ে গভীর বিবেচনার স্বার্থেই আমাদের থামতে হয়। একজন লেখকের কাজ এটাই। অতীতে কী ঘটেছিল তা নিয়ে ভাবা, আর পুনর্মূল্যায়ন করা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার জন্য তেমনই একটা দিন। আগেও আমি বলেছি, ১৫ আগস্ট আসলে উইলিয়াম ফকনারের এক উক্তি আমার মনে পড়ে। উক্তিটা হলোঃ "অতীতের মৃত্যু হয় না কখনও, এমনকি অতীত বলে কিছু নেই।"
কোন কোন বছর আমি একটু থেমে সেদিনকার কথা স্মরণ করি। তারপর আবার নিজের কাজে ফিরে যাই। কিছু স্মৃতি মাথায় আটকে থাকে।
তবে এই বছর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়ের পাতা উলটে দেখব। সেই ইতিহাস কেবল বাঙালিদের নয়, আমার মতো আমেরিকানদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় সংঘটিত হয়েছিল এক হত্যাকাণ্ড।
সেই হত্যাকাণ্ড সম্ভব হয়ে উঠেছিল কয়েকটি ঘটনার ধারাবাহিকতায়। সে হত্যাকাণ্ডে কেবল কি বাংলাদেশিরাই জড়িত ছিল? নাকি তাদের উৎসাহিত করা হয়েছিল, এমনকি হত্যার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল?
বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্র, দুই দেশেই এমন কিছু মানুষ আছেন যারা হত্যাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির হাতিয়ার বানানোর বিপক্ষে। তারা মনে করেন, এরকম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় নেওয়া উচিত।
আজ আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সহিংসতার কথা স্মরণ করি। কিন্তু সে ঘটনার এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে আমাদের বোঝায় ঘাটতি রয়ে গেছে।
অনেকটাই এখন আমরা জানি। তারপরও এখন আমাদের হাতে এসেছে নতুন তথ্য। হয়ত এই তথ্য নতুন সূত্রের খোঁজ দেবে, আমাদের জানার পরিসর বিস্তৃত করবে।
অভ্যুত্থানের আগে, ঢাকায় এক বৈঠক
কিছু দিন আগে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে আমি এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেই। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সম্পর্কে ভাবছিলাম আমি। ভাগ্য ভালো যে আমরা দুইজনই জীবিত আছি।
তিন দশক আগে যেদিন তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল আমার, সেদিন তিনি আমার পাশে বসে নিচুস্বরে জানিয়েছিলেন, আমার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে। শুধু এটুকুই। তবে তাঁর চেহারা ছিল অত্যন্ত গম্ভীর।
আমরা একে অপরকে চিনতাম। খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল তা না। তবে তাঁর দুর্দান্ত এক সাহসী কর্মকাণ্ডের কথা জানতাম আমি। একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে তিনি যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেজন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করতাম। সেদিন সন্ধ্যায় আমি ঢাকায় তাঁর বাড়িতে গেলাম। ভদ্রলোক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমাকে এক আড্ডায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে অনেক ভিড় ছিল, একান্ত আলাপ করাটা ছিল কঠিন। পরদিন সন্ধ্যায় আবারও আসার অনুরোধ করলেন তিনি। আমি বললাম সময়মত চলে আসব।
অবশ্য সে কথা আমি রাখতে পারিনি, কারণ পরদিনই আমাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে রিপোর্ট করতে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেটাকে বিচার বলাটা ঠিক হবে না। আসলে সে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তার বন্ধু আবু তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যবস্থা করছিলেন। একসময় এই তাহেরই জিয়ার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
আমি ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির জন্য রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলাম। ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব অঞ্চলের সংবাদমাধ্যমেই তাহেরের বিচার সংক্রান্ত খবরটি পুরোপুরিভাবে ধামাচাপা দেওয়া হলো। আমার করা একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিবিসির বাংলা সংস্করণে প্রথম তাহেরের বিচারের খবরটি প্রকাশ পায়।
ব্যাংককে রয়টার্সের অফিসে আমার প্রতিবেদন পাঠানোর একটা উপায় করেছিলাম। সেখান থেকে ওরা হংকং আর লন্ডনে আমার সম্পাদকদের কাছে পাঠিয়ে দিত। ঢাকা টেলেক্স অফিস থেকে আমার প্রতিবেদন আদান-প্রদান প্রক্রিয়া এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রাখা হলো। আমাকে তিনদিন ধরে আটকে রাখার পর ব্যাংককে পাঠিয়ে দেওয়া হল। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক, দুইদিক দিয়েই সম্পূর্ণ সেন্সরশিপ আরোপ করা হল।
ওই ভদ্রলোক কী বলতে চেয়েছিলেন তা আর শুনতে যাওয়া হয়নি আমার। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর আমি যখন একটি সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা যাই, আমি সিদ্ধান্ত নিই ওই লোকের সঙ্গে দেখা করব। আর কিছু না হোক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারার জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাইব। তবে এত বছর আগে তিনি আমাকে কী বলতে চেয়েছিলেন তা জানার জন্য খুব আগ্রহ হচ্ছিলো। আমি তাঁর অফিসে যোগাযোগ করার পর তিনি বললেন, আপনি এখুনি চলে আসুন।
আমি পৌঁছানোর পর তিনি আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ের সে দিনটিতে দেখা না করায় তিনি আমাকে খানিক তিরস্কার করলেন। বললেন, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আর সেই রাতেই আপনার গ্রেফতার হতে হলো? অবশেষে ক্ষমা মিলল। চা দেওয়া হলো। তাঁর আস্থাভাজন এক ব্যক্তি যেন আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন, তিনি তার ব্যবস্থা করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা আমাকে বলতে চেয়েছিলেন তা মনে আছে কিনা। জবাবে তিনি বললেন, ‘এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে।’ এরপর তিনি গম্ভীর হয়ে গেলেন।
পরবর্তী এক ঘণ্টা তিনি আমাকে এক গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী শোনালেন। তারপর কয়েকদিন ধরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা, দুপুর অথবা রাতের খাবার খেতে খেতে। তাঁর স্ত্রী ছিলেন আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী। স্বামীর কথার সত্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোথাও কোথাও নিজের স্মৃতি থেকে আরও কথা জানাচ্ছিলেন তিনি। এই হল সেই বৃত্তান্ত।
ঘটনাটা ছিল ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের ঠিক আগে।
তখনকার ঢাকার কূটনৈতিক মহলে ওই ভদ্রলোকের অনেক বন্ধু ছিল। ব্যবসার খাতিরেই এসব মানুষের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তিনি আমাকে বললেন, মার্কিন দূতাবাসে তখন তাঁর একজন বন্ধু ছিল। এক রাজনৈতিক কর্মকর্তা। তার নাম ফিলিপ চেরি। তাঁর কথায়, ফিলিপ চেরি ছিলেন এক সুদর্শন ও চমৎকার ব্যক্তিত্বের মানুষ। বাংলাদেশের জন্য তার মনে অনেক ভালবাসা। মাঝে মাঝে তাঁর গাড়িতে করে চেরিকে নিয়ে যেতেন নিজের কারখানাগুলোতে। ফিল চেরির মুখে বারবার শোনা যেত, বাংলাদেশ কি সুন্দর একটা দেশ!
১৯৭৫ সালের জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরুতে ফিলিপ চেরি ওই ভদ্রলোককে ফোন করে বলেন, তিনি তাঁর বাড়িতে একটি নৈশভোজের আয়োজন করতে পারেন কিনা। ভদ্রলোক সানন্দে রাজি হলেন। চেরি কি নির্দিষ্ট কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে চায়? চেরি তাঁকে বলল, সে চায় কেবল একজন অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হোক। তবে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে আসতে কোনও সমস্যা নেই। সেই অতিথি ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।
ভদ্রলোক জেনারেল জিয়াকে চিনতেন। তিনি জানালেন, ওই নৈশভোজ আয়োজন করতে পারলে তিনি খুশিই হবেন। চেরি কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বললেন। নৈশভোজের আয়োজন হলো। জেনারেল জিয়া তার স্ত্রী খালেদাসহ সেখানে পৌঁছালেন। ফিলিপ চেরিও তার স্ত্রীসহ সেখানে গেলেন। ওই নৈশভোজে এই তিন দম্পতির বাইরে আর কেউ ছিলেন না।
আমার বন্ধুটি জানান, অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগে নৈশভোজটি আয়োজিত হয়েছিল। তবে তাঁর স্ত্রীর স্মৃতি বলে, এটা দশ দিন আগের ঘটনা। দুই অতিথি তাঁর বাড়িতে পৌঁছানোর পরপরই পরিষ্কার হয়ে গেলো, তারা নিজেদের মধ্যেই আলাপ করতে এসেছে।
জেনারেল জিয়া ও ফিলিপ চেরি বাগানের ভেতরে গেল এবং খাবার পরিবেশনের আগ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলল। জিয়া ও চেরিকে দেখে মনে হলো তারা একে অপরের চেনা। নৈশভোজের পর তারা আরেকবার বাগানে গেল এবং আলোচনা করতে লাগল। ওই সময়ে দেখে মনে হয়েছিল তারা গালগল্প করছে। অবশ্য অভ্যুত্থানের পর ভদ্রলোক ও তাঁর পরিবারের উপলব্ধি হয় যে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পরদিন ভদ্রলোক এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি গাড়ি চালিয়ে গুলশানে ফিলিপ চেরির বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। তাঁর চোখে ছিল ক্ষোভের অশ্রু। তিনি প্রশ্ন করতে থাকেন, কীভাবে এমনটা হল। বারবার বলেন, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তাঁর নিজের মায়ের মতো ছিলেন। তারা তাকে মেরে ফেলেছে। কেন? পুরো পরিবারকে হত্যা করা নিয়ে তিনি ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত ছিলেন। বারবার জানতে চাইছিলেন, ‘কীভাবে এমনটা হলো?”
চেরির স্ত্রী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল, তাকে চা দিয়েছিল। চেরি তাকে বলছিল, “আমি জানি তুমি ওই পরিবারের খুব কাছের মানুষ ছিলে।” রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবসায়ী ভদ্রলোক চলে যান। এরপর তিনি আর চেরির দেখা পাননি। তাদের পরিবার রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা জানেন, জিয়া-চেরির সেই ডিনার কোনও সামাজিক সাক্ষাৎ ছিল না। তাঁরা ভালো করেই বুঝেছিলেন, সামরিক অভ্যুত্থানের সময় জিয়ার ভূমিকা কী ছিল, ১৫ আগস্ট মেজর ফারুক ও মেজর রশিদের সেই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের সময় সেনাবাহিনীকে তাদের বাধা দেওয়া থেকে বিরত রাখতে তিনি কী করেছিলেন।
অনেকেই বুঝতে পেরেছিল যে অভ্যুত্থানে জিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জেনারেল জিয়া বিরোধিতা করলে এই অভ্যুত্থান সম্ভবই ছিল না। তথ্য-প্রমাণ থেকেও বোঝা যায়, অভ্যুত্থানে মূল কারিগরের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিয়া। খন্দকার মুশতাক আহমেদের চেয়ে তার ভূমিকাই বড় ছিল।
পরবর্তী আরেক ঢাকা সফরে, এক সন্ধ্যায় চেরি-জিয়ার বৈঠক নিয়ে আলাপকালে ওই ব্যবসায়ী ভদ্রলোককে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, চেরি যে সে সময়ের ঢাকার সিআইএ স্টেশন প্রধান ছিল তা তিনি জানতেন কিনা। আমার কথা শুনে তিনি চমকে ওঠেন। বলেন, আমি ভেবেছিলাম সে দূতাবাসের কোনও রাজনৈতিক কর্মকতা।
চেরিই যে ছিল ঢাকায় তখনকার সিআইএ স্টেশন প্রধান, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, এবং আমি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আগের লেখাতেও এটা উল্লেখ করেছি । একদম নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমি। আমার সূত্র - বাংলাদেশে তখন নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্বয়ং।
কিছু দিন আগে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে আমি এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেই। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সম্পর্কে ভাবছিলাম আমি। ভাগ্য ভালো যে আমরা দুইজনই জীবিত আছি।
তিন দশক আগে যেদিন তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল আমার, সেদিন তিনি আমার পাশে বসে নিচুস্বরে জানিয়েছিলেন, আমার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে। শুধু এটুকুই। তবে তাঁর চেহারা ছিল অত্যন্ত গম্ভীর।
আমরা একে অপরকে চিনতাম। খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল তা না। তবে তাঁর দুর্দান্ত এক সাহসী কর্মকাণ্ডের কথা জানতাম আমি। একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে তিনি যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেজন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করতাম। সেদিন সন্ধ্যায় আমি ঢাকায় তাঁর বাড়িতে গেলাম। ভদ্রলোক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমাকে এক আড্ডায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে অনেক ভিড় ছিল, একান্ত আলাপ করাটা ছিল কঠিন। পরদিন সন্ধ্যায় আবারও আসার অনুরোধ করলেন তিনি। আমি বললাম সময়মত চলে আসব।
অবশ্য সে কথা আমি রাখতে পারিনি, কারণ পরদিনই আমাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে রিপোর্ট করতে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেটাকে বিচার বলাটা ঠিক হবে না। আসলে সে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তার বন্ধু আবু তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যবস্থা করছিলেন। একসময় এই তাহেরই জিয়ার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
আমি ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির জন্য রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলাম। ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব অঞ্চলের সংবাদমাধ্যমেই তাহেরের বিচার সংক্রান্ত খবরটি পুরোপুরিভাবে ধামাচাপা দেওয়া হলো। আমার করা একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিবিসির বাংলা সংস্করণে প্রথম তাহেরের বিচারের খবরটি প্রকাশ পায়।
ব্যাংককে রয়টার্সের অফিসে আমার প্রতিবেদন পাঠানোর একটা উপায় করেছিলাম। সেখান থেকে ওরা হংকং আর লন্ডনে আমার সম্পাদকদের কাছে পাঠিয়ে দিত। ঢাকা টেলেক্স অফিস থেকে আমার প্রতিবেদন আদান-প্রদান প্রক্রিয়া এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রাখা হলো। আমাকে তিনদিন ধরে আটকে রাখার পর ব্যাংককে পাঠিয়ে দেওয়া হল। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক, দুইদিক দিয়েই সম্পূর্ণ সেন্সরশিপ আরোপ করা হল।
ওই ভদ্রলোক কী বলতে চেয়েছিলেন তা আর শুনতে যাওয়া হয়নি আমার। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর আমি যখন একটি সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা যাই, আমি সিদ্ধান্ত নিই ওই লোকের সঙ্গে দেখা করব। আর কিছু না হোক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারার জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাইব। তবে এত বছর আগে তিনি আমাকে কী বলতে চেয়েছিলেন তা জানার জন্য খুব আগ্রহ হচ্ছিলো। আমি তাঁর অফিসে যোগাযোগ করার পর তিনি বললেন, আপনি এখুনি চলে আসুন।
আমি পৌঁছানোর পর তিনি আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ের সে দিনটিতে দেখা না করায় তিনি আমাকে খানিক তিরস্কার করলেন। বললেন, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আর সেই রাতেই আপনার গ্রেফতার হতে হলো? অবশেষে ক্ষমা মিলল। চা দেওয়া হলো। তাঁর আস্থাভাজন এক ব্যক্তি যেন আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন, তিনি তার ব্যবস্থা করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা আমাকে বলতে চেয়েছিলেন তা মনে আছে কিনা। জবাবে তিনি বললেন, ‘এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে।’ এরপর তিনি গম্ভীর হয়ে গেলেন।
পরবর্তী এক ঘণ্টা তিনি আমাকে এক গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী শোনালেন। তারপর কয়েকদিন ধরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা, দুপুর অথবা রাতের খাবার খেতে খেতে। তাঁর স্ত্রী ছিলেন আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী। স্বামীর কথার সত্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোথাও কোথাও নিজের স্মৃতি থেকে আরও কথা জানাচ্ছিলেন তিনি। এই হল সেই বৃত্তান্ত।
ঘটনাটা ছিল ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের ঠিক আগে।
তখনকার ঢাকার কূটনৈতিক মহলে ওই ভদ্রলোকের অনেক বন্ধু ছিল। ব্যবসার খাতিরেই এসব মানুষের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তিনি আমাকে বললেন, মার্কিন দূতাবাসে তখন তাঁর একজন বন্ধু ছিল। এক রাজনৈতিক কর্মকর্তা। তার নাম ফিলিপ চেরি। তাঁর কথায়, ফিলিপ চেরি ছিলেন এক সুদর্শন ও চমৎকার ব্যক্তিত্বের মানুষ। বাংলাদেশের জন্য তার মনে অনেক ভালবাসা। মাঝে মাঝে তাঁর গাড়িতে করে চেরিকে নিয়ে যেতেন নিজের কারখানাগুলোতে। ফিল চেরির মুখে বারবার শোনা যেত, বাংলাদেশ কি সুন্দর একটা দেশ!
১৯৭৫ সালের জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরুতে ফিলিপ চেরি ওই ভদ্রলোককে ফোন করে বলেন, তিনি তাঁর বাড়িতে একটি নৈশভোজের আয়োজন করতে পারেন কিনা। ভদ্রলোক সানন্দে রাজি হলেন। চেরি কি নির্দিষ্ট কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে চায়? চেরি তাঁকে বলল, সে চায় কেবল একজন অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হোক। তবে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে আসতে কোনও সমস্যা নেই। সেই অতিথি ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।
ভদ্রলোক জেনারেল জিয়াকে চিনতেন। তিনি জানালেন, ওই নৈশভোজ আয়োজন করতে পারলে তিনি খুশিই হবেন। চেরি কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বললেন। নৈশভোজের আয়োজন হলো। জেনারেল জিয়া তার স্ত্রী খালেদাসহ সেখানে পৌঁছালেন। ফিলিপ চেরিও তার স্ত্রীসহ সেখানে গেলেন। ওই নৈশভোজে এই তিন দম্পতির বাইরে আর কেউ ছিলেন না।
আমার বন্ধুটি জানান, অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগে নৈশভোজটি আয়োজিত হয়েছিল। তবে তাঁর স্ত্রীর স্মৃতি বলে, এটা দশ দিন আগের ঘটনা। দুই অতিথি তাঁর বাড়িতে পৌঁছানোর পরপরই পরিষ্কার হয়ে গেলো, তারা নিজেদের মধ্যেই আলাপ করতে এসেছে।
জেনারেল জিয়া ও ফিলিপ চেরি বাগানের ভেতরে গেল এবং খাবার পরিবেশনের আগ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলল। জিয়া ও চেরিকে দেখে মনে হলো তারা একে অপরের চেনা। নৈশভোজের পর তারা আরেকবার বাগানে গেল এবং আলোচনা করতে লাগল। ওই সময়ে দেখে মনে হয়েছিল তারা গালগল্প করছে। অবশ্য অভ্যুত্থানের পর ভদ্রলোক ও তাঁর পরিবারের উপলব্ধি হয় যে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পরদিন ভদ্রলোক এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি গাড়ি চালিয়ে গুলশানে ফিলিপ চেরির বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। তাঁর চোখে ছিল ক্ষোভের অশ্রু। তিনি প্রশ্ন করতে থাকেন, কীভাবে এমনটা হল। বারবার বলেন, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তাঁর নিজের মায়ের মতো ছিলেন। তারা তাকে মেরে ফেলেছে। কেন? পুরো পরিবারকে হত্যা করা নিয়ে তিনি ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত ছিলেন। বারবার জানতে চাইছিলেন, ‘কীভাবে এমনটা হলো?”
চেরির স্ত্রী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল, তাকে চা দিয়েছিল। চেরি তাকে বলছিল, “আমি জানি তুমি ওই পরিবারের খুব কাছের মানুষ ছিলে।” রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবসায়ী ভদ্রলোক চলে যান। এরপর তিনি আর চেরির দেখা পাননি। তাদের পরিবার রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা জানেন, জিয়া-চেরির সেই ডিনার কোনও সামাজিক সাক্ষাৎ ছিল না। তাঁরা ভালো করেই বুঝেছিলেন, সামরিক অভ্যুত্থানের সময় জিয়ার ভূমিকা কী ছিল, ১৫ আগস্ট মেজর ফারুক ও মেজর রশিদের সেই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের সময় সেনাবাহিনীকে তাদের বাধা দেওয়া থেকে বিরত রাখতে তিনি কী করেছিলেন।
অনেকেই বুঝতে পেরেছিল যে অভ্যুত্থানে জিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জেনারেল জিয়া বিরোধিতা করলে এই অভ্যুত্থান সম্ভবই ছিল না। তথ্য-প্রমাণ থেকেও বোঝা যায়, অভ্যুত্থানে মূল কারিগরের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিয়া। খন্দকার মুশতাক আহমেদের চেয়ে তার ভূমিকাই বড় ছিল।
পরবর্তী আরেক ঢাকা সফরে, এক সন্ধ্যায় চেরি-জিয়ার বৈঠক নিয়ে আলাপকালে ওই ব্যবসায়ী ভদ্রলোককে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, চেরি যে সে সময়ের ঢাকার সিআইএ স্টেশন প্রধান ছিল তা তিনি জানতেন কিনা। আমার কথা শুনে তিনি চমকে ওঠেন। বলেন, আমি ভেবেছিলাম সে দূতাবাসের কোনও রাজনৈতিক কর্মকতা।
চেরিই যে ছিল ঢাকায় তখনকার সিআইএ স্টেশন প্রধান, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, এবং আমি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আগের লেখাতেও এটা উল্লেখ করেছি । একদম নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমি। আমার সূত্র - বাংলাদেশে তখন নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্বয়ং।
কার হুকুমে?
তো যেটা বোঝা যাচ্ছে তা হল যে, সামরিক অভ্যুত্থানের প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ও আমেরিকার সিআইএ স্টেশন চিফের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছয় মাস আগেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্পষ্ট করে দূতাবাসের সবাইকে বলে দিয়েছিলেন যে মুজিব সরকার পতনের চেষ্টায় নিয়োজিত কারও সঙ্গে যেন যোগাযোগ না করা হয়।
১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে কিছু ব্যক্তির ক্রমাগত মিটিং হয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রার্থী ছিল। পরবর্তী কোনও এক নিবন্ধে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক আগে ফিলিপ চেরি ও জিয়াউর রহমান ঢাকায় কারও বাসায় বৈঠকে বসে। উপরমহলের সম্মতি না থাকলে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা কিংবা কথা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না চেরির। রাষ্ট্রদূত বোস্টার যেহেতু এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তার মানে তাকে অন্য কেউ নির্দেশনা দিয়েছিল। সিআইএ স্টেশন চিফ হয়তো ওয়াশিংটন কিংবা ল্যাংলিতে সিআইএ সদরদপ্তরের নির্দেশমতো কাজ করছিল।
ব্রিটিশ লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন তার বই ‘দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’-এ বাংলাদেশ নিয়ে একটি অধ্যায় রেখেছেন। তার মতে, ১৯৭৪ সালের আগস্টে নিক্সনের মৃত্যুর পর এই নির্দেশ দেওয়া ও অভ্যুত্থানের সমর্থন করার মতো সক্ষম একমাত্র একজনই ছিলেন। হিচেন তার বইয়ে লেখেন:
"রাষ্ট্রদূত বোস্টার বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার সিআইএ স্টেশন নেপথ্য কোনও ক্ষমতাশক্তির নির্দেশনায় কাজ করছে, যার সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ওয়াশিংটনের সম্পৃক্ততা ছাড়া এধরণের অপারেশন হত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্থহীন। আর সেখানে, ফোর্টি কমিটি [সিআইএর গোপন অপারেশনের নিয়ন্ত্রক] আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সুতো বাঁধা ছিল একজনের মুঠোতেই।"
হিচেনের মতে এই মুঠো ছিল হেনরি কিসিঞ্জারের।
ফিলিপ চেরি ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হাজির করে: মার্কিন সরকারের পক্ষে কে চেরিকে নির্দেশনা দিচ্ছিলো? তার এই নির্দেশনা কি ফোর্টি কমিটি থেকে দেওয়া হয়েছিল? নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা হেনরি কিসিঞ্জারের দল সরাসরি এই নির্দেশনা দেয়? পরবর্তী একটি নিবন্ধে এসব প্রশ্ন মীমাংসার চেষ্টা করা হবে।
তথ্যসূত্র -ঢাকা ট্রিবিউন
১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে কিছু ব্যক্তির ক্রমাগত মিটিং হয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রার্থী ছিল। পরবর্তী কোনও এক নিবন্ধে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক আগে ফিলিপ চেরি ও জিয়াউর রহমান ঢাকায় কারও বাসায় বৈঠকে বসে। উপরমহলের সম্মতি না থাকলে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা কিংবা কথা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না চেরির। রাষ্ট্রদূত বোস্টার যেহেতু এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তার মানে তাকে অন্য কেউ নির্দেশনা দিয়েছিল। সিআইএ স্টেশন চিফ হয়তো ওয়াশিংটন কিংবা ল্যাংলিতে সিআইএ সদরদপ্তরের নির্দেশমতো কাজ করছিল।
ব্রিটিশ লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন তার বই ‘দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’-এ বাংলাদেশ নিয়ে একটি অধ্যায় রেখেছেন। তার মতে, ১৯৭৪ সালের আগস্টে নিক্সনের মৃত্যুর পর এই নির্দেশ দেওয়া ও অভ্যুত্থানের সমর্থন করার মতো সক্ষম একমাত্র একজনই ছিলেন। হিচেন তার বইয়ে লেখেন:
"রাষ্ট্রদূত বোস্টার বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার সিআইএ স্টেশন নেপথ্য কোনও ক্ষমতাশক্তির নির্দেশনায় কাজ করছে, যার সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ওয়াশিংটনের সম্পৃক্ততা ছাড়া এধরণের অপারেশন হত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্থহীন। আর সেখানে, ফোর্টি কমিটি [সিআইএর গোপন অপারেশনের নিয়ন্ত্রক] আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সুতো বাঁধা ছিল একজনের মুঠোতেই।"
হিচেনের মতে এই মুঠো ছিল হেনরি কিসিঞ্জারের।
ফিলিপ চেরি ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হাজির করে: মার্কিন সরকারের পক্ষে কে চেরিকে নির্দেশনা দিচ্ছিলো? তার এই নির্দেশনা কি ফোর্টি কমিটি থেকে দেওয়া হয়েছিল? নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা হেনরি কিসিঞ্জারের দল সরাসরি এই নির্দেশনা দেয়? পরবর্তী একটি নিবন্ধে এসব প্রশ্ন মীমাংসার চেষ্টা করা হবে।
তথ্যসূত্র -ঢাকা ট্রিবিউন
0 comments :
Post a Comment